বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চোখ একটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, আর এর যত্ন নেওয়াটাও ঠিক ততটাই জরুরি। আজকাল স্মার্টফোন, কম্পিউটার আর চারপাশের ধুলো-ধোঁয়া মিলিয়ে চোখের ওপর চাপ যেন বেড়েই চলেছে। অনেকেই চোখের ছোটখাটো সমস্যাতেও চিন্তায় পড়ে যান, কখন কোন ড্রপ ব্যবহার করবেন বা আদৌ ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত কিনা, তা নিয়ে দ্বিধা থাকে। আমার নিজের অভিজ্ঞতাতেও দেখেছি, সামান্য চোখ লাল হওয়া থেকে শুরু করে অ্যালার্জি বা শুষ্ক চোখের সমস্যায় অনেকেই ভুলভাল ড্রপ ব্যবহার করে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলেন। আসলে, চোখ আমাদের এতটাই সংবেদনশীল যে ভুলভাল কিছু ব্যবহার করলে তার ফল মারাত্মক হতে পারে। একজন ভালো চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া কোনো ড্রপ ব্যবহার না করাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ বাজারে বিভিন্ন ধরনের চোখের ড্রপ পাওয়া গেলেও, প্রতিটির কার্যকারিতা ও ব্যবহারের নিয়ম কিন্তু ভিন্ন। চিকিৎসকরা সাধারণত রোগীর অবস্থা বুঝে নির্দিষ্ট ড্রপ প্রেসক্রাইব করেন। তাহলে চলুন, চোখের যত্ন এবং সঠিক প্রেসক্রাইবড ড্রপগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
দৃষ্টিশক্তি সুরক্ষায় নিয়মিত যত্নের গুরুত্ব

আমাদের চোখ দুটো শরীরের সবচেয়ে মূল্যবান অঙ্গগুলোর মধ্যে অন্যতম। আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আধুনিক জীবনে আমাদের জীবনযাত্রার ধরন যেভাবে পাল্টেছে, তাতে চোখের ওপর চাপ মারাত্মকভাবে বেড়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রিনের সামনে বসে কাজ করা, মোবাইলে বুঁদ হয়ে থাকা, দূষণ আর ধুলোবালির মধ্যে ঘোরাঘুরি—এসবই আমাদের চোখের জন্য নীরব ঘাতকের মতো কাজ করে। একটা সময় ছিল যখন চোখের সমস্যা মানেই মনে হতো বয়সের সাথে সম্পর্কিত কোনো ব্যাপার। কিন্তু এখন কম বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যেও শুষ্ক চোখ, চোখ লাল হওয়া বা দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতা খুব সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই চোখের যত্ন নেওয়াটা এখন আর কেবল বাড়তি কিছু নয়, বরং আমাদের প্রতিদিনের রুটিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠা উচিত। আমি দেখেছি, অনেকেই চোখের ছোটখাটো সমস্যাকে অবহেলা করেন, কিন্তু এই অবহেলাই পরবর্তীতে বড় কোনো সমস্যার জন্ম দিতে পারে। চোখের নিয়মিত চেকআপ, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং প্রয়োজনীয় বিশ্রাম—এগুলো চোখের দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। আমার নিজের অভিজ্ঞতা বলে, সামান্য কিছু পরিবর্তন আমাদের চোখের স্বাস্থ্যের ওপর বিশাল ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
চোখের যত্নে প্রতিদিনের অভ্যাস
চোখের যত্নের জন্য কিছু সহজ অভ্যাস গড়ে তোলা খুবই জরুরি। আমি দেখেছি, অনেকেই স্ক্রিনের সামনে কাজ করার সময় ঘন ঘন পলক ফেলতে ভুলে যান, যার ফলে চোখ দ্রুত শুষ্ক হয়ে যায়। ২০-২০-২০ নিয়মটি এক্ষেত্রে দারুণ কার্যকর—প্রতি ২০ মিনিট পর পর ২০ ফুট দূরের কোনো বস্তুর দিকে ২০ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকা। এতে চোখের পেশীগুলো কিছুটা বিশ্রাম পায়। এছাড়া, পর্যাপ্ত ঘুম চোখের জন্য অপরিহার্য। ঘুমের সময় আমাদের চোখ নিজেকে সারিয়ে তোলে এবং তরতাজা হয়। আমার মনে হয়, দিনের শেষে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম নিশ্চিত করা উচিত। চোখ ধোয়ার ক্ষেত্রে পরিষ্কার জল ব্যবহার করা এবং হাতে লাগিয়ে ঘষাঘষি না করাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলোই চোখের স্বাল্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা
শুধু বাহ্যিক যত্নই নয়, আমাদের খাওয়া-দাওয়াও চোখের স্বাস্থ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। ভিটামিন এ, সি, ই এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার চোখের জন্য খুবই উপকারী। আমি নিজে শাক-সবজি, রঙিন ফলমূল যেমন গাজর, পালংশাক, কমলা, পেঁপে, মিষ্টি আলু ইত্যাদি বেশি করে খাওয়ার চেষ্টা করি। মাছের তেল বা ফ্ল্যাক্স সিডও ওমেগা-৩ এর ভালো উৎস। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার বয়সজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন (AMD) এবং ছানি পড়ার ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে। আসলে, আমাদের শরীর একটা জটিল যন্ত্রের মতো, এর প্রতিটি অংশ একে অপরের সাথে সংযুক্ত। তাই সামগ্রিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারলেই চোখও সুস্থ থাকবে।
বিভিন্ন চোখের সমস্যার জন্য সঠিক ড্রপ নির্বাচন
বাজারে হরেক রকমের চোখের ড্রপ পাওয়া যায়, আর কোনটা কখন ব্যবহার করতে হবে তা নিয়ে অনেকেরই ধন্ধ থাকে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে কোনো ড্রপ ব্যবহার করাটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কারণ এক ধরনের ড্রপ হয়তো চোখের অ্যালার্জির জন্য ভালো, কিন্তু অন্য কোনো সমস্যার জন্য তা ক্ষতিকরও হতে পারে। ধরুন, আমার এক পরিচিত ব্যক্তি সামান্য চোখ লাল হওয়া দেখে নিজে থেকেই অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করা শুরু করেছিলেন, কিন্তু পরে দেখা গেল তার চোখ লাল হওয়ার কারণ ছিল শুষ্কতা, কোনো সংক্রমণ নয়। ভুল ড্রপ ব্যবহারের ফলে তার চোখ আরও বেশি অস্বস্তিতে পড়েছিল। তাই সঠিক ড্রপ নির্বাচন করার আগে চোখের সমস্যাটি আসলে কী, তা ভালোভাবে জানা খুব জরুরি। বিভিন্ন ধরনের ড্রপের কার্যকারিতা এবং ব্যবহার ক্ষেত্র ভিন্ন ভিন্ন হয়।
সাধারণ ব্যবহৃত চোখের ড্রপের প্রকারভেদ
চোখের ড্রপগুলোকে মূলত কয়েকটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন—অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ, অ্যান্টিহিস্টামিন ড্রপ, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রপ, লুব্রিকেটিং ড্রপ বা কৃত্রিম অশ্রু, এবং গ্লুকোমার জন্য ব্যবহৃত ড্রপ। অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপগুলো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। অ্যালার্জির কারণে চোখ চুলকালে বা লাল হলে অ্যান্টিহিস্টামিন ড্রপ ব্যবহার করা হয়। প্রদাহ কমাতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রপ কাজে লাগে। শুষ্ক চোখের জন্য লুব্রিকেটিং ড্রপ বা কৃত্রিম অশ্রু সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়, যা চোখকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। গ্লুকোমা রোগীদের চোখের চাপ কমানোর জন্য নির্দিষ্ট ড্রপ ব্যবহার করতে হয়। আমি যখন প্রথম চোখ নিয়ে লেখালেখি শুরু করি, তখন এই পার্থক্যগুলো বুঝতে অনেক সময় লেগেছিল। কিন্তু এখন মনে করি, সাধারণ মানুষের জন্য এই প্রাথমিক ধারণা থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কোন পরিস্থিতিতে কোন ড্রপ? একটি সাধারণ নির্দেশিকা
কোন পরিস্থিতিতে কোন ড্রপ ব্যবহার করবেন, তার একটা সাধারণ ধারণা নিচে দেওয়া হলো। তবে আবারও বলছি, এটি কেবল একটি সাধারণ ধারণা, চিকিৎসকের পরামর্শই চূড়ান্ত।
| সমস্যা | সম্ভাব্য ড্রপের ধরন | কখন ব্যবহার করবেন (চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে) |
|---|---|---|
| শুষ্ক চোখ | লুব্রিকেটিং ড্রপ (কৃত্রিম অশ্রু) | কম্পিউটারের সামনে দীর্ঘক্ষণ কাজ করলে, ধুলোবালিতে থাকলে, চোখে শুষ্কতা অনুভব করলে। |
| চোখের অ্যালার্জি (চুলকানি, লালচে ভাব) | অ্যান্টিহিস্টামিন ড্রপ | ধুলো, পরাগ বা অন্য কোনো অ্যালার্জেন থেকে চোখ চুলকালে বা লাল হলে। |
| ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ (পিচুটি, ব্যথা) | অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ | চোখ থেকে হলুদ বা সবুজ স্রাব বের হলে, চোখে ব্যথা বা অস্বস্তি হলে (বিশেষ করে ডাক্তারের নির্দেশ ছাড়া নয়)। |
| চোখের প্রদাহ | অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রপ | চোখে আঘাত লাগলে বা কোনো অপারেশনের পর প্রদাহ কমাতে। |
| গ্লুকোমা | বিশেষ গ্লুকোমা ড্রপ | চোখের চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত ব্যবহার করতে হয় (শুধুমাত্র চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী)। |
অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস এবং তার সমাধান
চোখের অ্যালার্জি বা অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস একটি খুবই সাধারণ সমস্যা, বিশেষ করে ঋতু পরিবর্তনের সময় বা ধুলোবালিপূর্ণ পরিবেশে। আমার নিজেরও ছোটবেলায় এই সমস্যা ছিল, চোখে অসম্ভব চুলকাতো এবং লাল হয়ে যেত। তখন মা চোখে গোলাপজল দিতেন, যা সাময়িক আরাম দিত বটে, কিন্তু সমস্যার সমাধান হতো না। আমি দেখেছি, এই সমস্যায় ভুগলে চোখ ফুলে যায়, পানি পড়ে এবং আলোর দিকে তাকাতে কষ্ট হয়। এটি সাধারণত বাতাসে ভেসে থাকা পরাগরেণু, ধুলোর কণা, পোষা প্রাণীর লোম বা কসমেটিক্সের কারণে হতে পারে। অ্যালার্জি যখন হয়, তখন চোখের ভেতরে মাস্ট কোষগুলো হিস্টামিন নামক একটি রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে, যার ফলেই চোখ চুলকানো, লাল হওয়া এবং পানি পড়ার মতো লক্ষণগুলো দেখা দেয়। ঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা না নিলে এটি বেশ অস্বস্তিকর হতে পারে এবং দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাহত করতে পারে।
অ্যালার্জির লক্ষণ ও প্রতিকার
অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিসের প্রধান লক্ষণগুলো হলো চোখে তীব্র চুলকানি, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখ থেকে পানি পড়া, হালকা জ্বালাপোড়া, এবং চোখের পাতা ফুলে যাওয়া। আমার অনেক বন্ধুকে দেখেছি, যারা এই সমস্যা হলে চোখ ঘষা শুরু করে, যা আসলে পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তোলে। চোখ ঘষলে চুলকানি সাময়িকভাবে কমলেও, প্রদাহ আরও বেড়ে যায় এবং চোখ আরও বেশি লাল হয়। এর প্রতিকার হিসেবে প্রথমেই অ্যালার্জেন থেকে দূরে থাকা জরুরি। যদি আপনি জানেন যে আপনার ধুলোতে অ্যালার্জি আছে, তাহলে বাইরে বের হলে চশমা ব্যবহার করুন। ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখুন এবং পোষা প্রাণীর লোম থেকে দূরে থাকুন। চোখের জন্য ঠান্ডা সেঁকও খুব আরামদায়ক হতে পারে। তবে সবচেয়ে কার্যকর হলো অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় চোখের ড্রপ ব্যবহার করা, যা হিস্টামিনের নিঃসরণ কমিয়ে লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। কিছু ক্ষেত্রে মাস্ট সেল স্টেবিলাইজার ড্রপও ব্যবহার করা হয়, যা অ্যালার্জির আক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। অবশ্যই একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েই এসব ড্রপ ব্যবহার করা উচিত।
দীর্ঘমেয়াদী অ্যালার্জির ক্ষেত্রে করণীয়
যাদের অ্যালার্জির সমস্যা দীর্ঘমেয়াদী বা খুব তীব্র, তাদের জন্য শুধু সাময়িক প্রতিকার যথেষ্ট নয়। আমি দেখেছি, কিছু মানুষের সারা বছরই অল্পবিস্তর অ্যালার্জির সমস্যা লেগে থাকে, বিশেষ করে শহুরে পরিবেশে। এই ক্ষেত্রে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ অ্যালার্জির কারণ নির্ণয়ের জন্য কিছু পরীক্ষা করাতে পারেন এবং দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য পরামর্শ দিতে পারেন। অনেক সময় ডাক্তাররা নির্দিষ্ট কিছু ইমিউনোমোডুলেটরি ড্রপস বা ওরাল মেডিসিনও প্রেসক্রাইব করতে পারেন। আমার মনে হয়, এই ধরনের সমস্যায় নিজের জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, বাইরে থেকে আসার পর ভালোভাবে মুখ ও চোখ ধোয়া, নির্দিষ্ট কিছু কসমেটিক্স এড়িয়ে চলা এবং চোখে হাত দেওয়ার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে নেওয়া। এটি আপনার চোখের অ্যালার্জির তীব্রতা কমাতে সাহায্য করবে।
শুষ্ক চোখের সমস্যা: আধুনিক জীবনযাত্রার এক বড় চ্যালেঞ্জ
বন্ধুরা, আপনারা কি কখনো মনে করেছেন যে আপনার চোখ দুটো শুকনো লাগছে, যেন কিছু একটা আটকে আছে? বা কম্পিউটারের সামনে কাজ করতে করতে হঠাৎ চোখ জ্বালা করছে, ঝাপসা দেখছেন?
আমার বিশ্বাস, অনেকেই আজকাল এই সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। আধুনিক জীবনযাত্রার এক বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই শুষ্ক চোখের সমস্যা বা ড্রাই আই সিন্ড্রোম। আমার নিজের অভিজ্ঞতাতেও দেখেছি, যখন আমি একটানা দীর্ঘক্ষণ ল্যাপটপের সামনে বসে ব্লগ পোস্ট লিখি, তখন প্রায়ই চোখ শুকিয়ে আসে, মনে হয় যেন চোখ দুটোয় বালির কণা ঢুকেছে। এর কারণ হলো, স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে আমরা সাধারণত কম পলক ফেলি, যার ফলে চোখ প্রয়োজনীয় অশ্রু উৎপাদন করতে পারে না বা অশ্রু দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যায়। শুধুমাত্র স্ক্রিন ব্যবহারই নয়, এয়ার কন্ডিশনড রুম, কম আর্দ্রতা, বাতাসের দূষণ, নির্দিষ্ট কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং এমনকি বয়স বাড়ার সাথে সাথেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
শুষ্ক চোখের লক্ষণ এবং কারণ
শুষ্ক চোখের প্রধান লক্ষণগুলো হলো চোখে জ্বালাপোড়া, খচখচ করা, কিছু আটকে থাকার অনুভূতি, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, ঝাপসা দেখা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পানি পড়া (যখন চোখ শুষ্কতা মোকাবেলায় অতিরিক্ত অশ্রু উৎপাদন করার চেষ্টা করে)। এই সমস্যা এতটাই প্রচলিত যে আমার মনে হয় এখন এটি এক ধরনের মহামারী। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে শুষ্ক চোখের সমস্যা বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে মেনোপজের পর হরমোনের পরিবর্তনের কারণে। এছাড়া, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা সজোগ্রেন’স সিনড্রোমের মতো কিছু অটোইমিউন রোগও শুষ্ক চোখের কারণ হতে পারে। আমি দেখেছি, অনেকে চোখের শুষ্কতাকে তেমন গুরুত্ব দেন না, কিন্তু এটি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে চোখের উপরিভাগে ক্ষয় হতে পারে এবং দৃষ্টিশক্তির ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
শুষ্ক চোখের জন্য কার্যকর সমাধান
শুষ্ক চোখের সমস্যার সমাধানে প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো লুব্রিকেটিং আই ড্রপ বা কৃত্রিম অশ্রু ব্যবহার করা। এই ড্রপগুলো চোখের পৃষ্ঠকে আর্দ্র রাখে এবং অস্বস্তি কমায়। বাজারে বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম অশ্রু পাওয়া যায়—কিছুতে প্রিজারভেটিভ থাকে, আবার কিছু প্রিজারভেটিভ-মুক্ত। যাদের চোখ খুব সংবেদনশীল বা যারা ঘন ঘন ড্রপ ব্যবহার করেন, তাদের জন্য প্রিজারভেটিভ-মুক্ত ড্রপ বেশি ভালো। আমি নিজে কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিয়মিত কৃত্রিম অশ্রু ব্যবহার করি এবং এতে দারুণ উপকার পেয়েছি। এছাড়া, চোখের পলক ফেলার হার বাড়ানো, কাজের ফাঁকে নিয়মিত বিরতি নেওয়া, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে ঘরের আর্দ্রতা বাড়ানো এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করাও শুষ্ক চোখের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। যদি সমস্যা গুরুতর হয়, তাহলে চিকিৎসক চোখের অশ্রু উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সাইক্লোস্পোরিন বা লিটিফটেগ্রাস্টের মতো ঔষধ প্রেসক্রাইব করতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে প্লাগ বসিয়ে অশ্রু নালী বন্ধ করে অশ্রু ধরে রাখার পদ্ধতিও ব্যবহার করা হয়।
চোখের সংক্রমণ: কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?

চোখের সংক্রমণ একটি গুরুতর সমস্যা যা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক বা পরজীবী দ্বারা হতে পারে। আমার মনে আছে, একবার আমার ভাগনির চোখে হালকা ব্যথা এবং লালচে ভাব হয়েছিল। প্রথমদিকে আমরা ভেবেছিলাম হয়তো সামান্য কিছু হয়েছে, কিন্তু যখন তার চোখ থেকে পিচুটি বের হওয়া শুরু হলো এবং চোখ খুলতে কষ্ট হচ্ছিল, তখন আর দেরি না করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। আসলে, চোখের সংক্রমণ চোখের যেকোনো অংশকে প্রভাবিত করতে পারে, যেমন—পলক, কনজাংটিভা (চোখের সাদা অংশের উপরের পাতলা ঝিল্লি), কর্নিয়া (চোখের সামনের স্বচ্ছ অংশ) বা এমনকি চোখের ভেতরের অংশও। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে এটি দৃষ্টিশক্তির মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে, এমনকি অন্ধত্বও ডেকে আনতে পারে। তাই চোখের সংক্রমণের লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং কখন পেশাদার সাহায্য নিতে হবে তা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সংক্রমণের সাধারণ লক্ষণ এবং বিপদ সংকেত
চোখের সংক্রমণের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো—চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখে ব্যথা বা অস্বস্তি, চোখ থেকে পিচুটি বা হলুদ/সবুজ স্রাব বের হওয়া, চোখ চুলকানো, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা (ফটোফোবিয়া), ঝাপসা দেখা, চোখের পাতা ফুলে যাওয়া এবং চোখে কিছু আটকে থাকার অনুভূতি। আমার অভিজ্ঞতা বলে, এই লক্ষণগুলোর মধ্যে কোনোটি দেখা দিলে প্রথমে চোখ ঘষা থেকে বিরত থাকুন এবং পরিষ্কার পানিতে হালকা করে ধুয়ে নিতে পারেন। তবে যদি ব্যথা তীব্র হয়, দৃষ্টিশক্তি হঠাৎ করে কমে যায়, আলোতে তাকাতে খুব কষ্ট হয়, বা চোখ থেকে ঘন স্রাব বের হয় এবং জ্বর আসে, তাহলে এটিকে বিপদ সংকেত হিসেবে নিতে হবে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে এক মুহূর্তও দেরি না করে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত। আমি দেখেছি, অনেকে নিজেরা অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করে থাকেন, যা সংক্রমণের ধরন ভুল হলে কোনো কাজ তো করেই না, বরং অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে ভবিষ্যতে চিকিৎসার পথ কঠিন করে তোলে।
চোখের সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয়
চোখের সংক্রমণ প্রতিরোধে কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি সবসময় বলি, চোখে হাত দেওয়ার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন। বিশেষ করে যারা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন, তাদের জন্য এটি অপরিহার্য। কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের নিয়মকানুন কঠোরভাবে মেনে চলুন, মেয়াদ উত্তীর্ণ লেন্স ব্যবহার করবেন না এবং লেন্স পরিষ্কার করার জন্য সঠিক সলিউশন ব্যবহার করুন। মেকআপ পণ্যগুলো চোখে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন, মেয়াদ উত্তীর্ণ মেকআপ ব্যবহার করবেন না এবং অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন না। পরিষ্কার তোয়ালে ব্যবহার করুন এবং ব্যক্তিগত জিনিসপত্র, যেমন বালিশের কভার, নিয়মিত পরিষ্কার করুন। এছাড়াও, যদি আপনার পরিবারে বা আশেপাশে কারো চোখে সংক্রমণ হয়, তাহলে তাদের থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখা ভালো। এই ছোট ছোট পদক্ষেপগুলোই আপনাকে চোখের সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে।
চোখের ড্রপের সঠিক ব্যবহার ও সংরক্ষণ পদ্ধতি
চোখের ড্রপ ব্যবহার করাটা যতটা সহজ মনে হয়, আসলে ততটা সহজ নয়। আমার অনেক পরিচিতকেই দেখেছি, তাড়াহুড়ো করে বা সঠিক নিয়ম না মেনে ড্রপ ব্যবহার করতে গিয়ে ড্রপার দিয়ে চোখ ছুঁয়ে ফেলেছেন অথবা মেয়াদ উত্তীর্ণ ড্রপ ব্যবহার করেছেন। এই ভুলগুলো চোখের উপকারের বদলে ক্ষতিই বেশি করে। আমি নিজে যখন প্রথম চোখের ড্রপ ব্যবহার করা শুরু করি, তখন কিছুটা জড়তা ছিল। কিন্তু পরে দেখলাম, কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললেই ড্রপ ব্যবহার করাটা খুব সহজ এবং নিরাপদ হয়ে ওঠে। আসলে চোখের ড্রপগুলো খুব সংবেদনশীল ঔষধ, তাই এগুলোর সঠিক ব্যবহার এবং সংরক্ষণ পদ্ধতি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। এতে করে ড্রপের কার্যকারিতা বজায় থাকে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।
ড্রপ ব্যবহারের আগে ও পরে করণীয়
প্রথমেই, চোখের ড্রপ ব্যবহারের আগে হাত সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, কারণ হাতের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া চোখে প্রবেশ করতে পারে। এরপর ড্রপের বোতলটি ঝাঁকিয়ে নিন (যদি নির্দেশ থাকে)। এবার মাথাটা সামান্য পিছনের দিকে হেলিয়ে উপরের চোখের পাতাকে নিচের দিকে টেনে ধরুন যাতে চোখের নিচে একটি পকেট তৈরি হয়। এবার ড্রপারের অগ্রভাগ চোখ থেকে কিছুটা দূরে রেখে এক ফোঁটা ড্রপ পকেটে ফেলুন। মনে রাখবেন, ড্রপারের মুখ যেন কোনোভাবেই চোখ বা চোখের পাতাকে স্পর্শ না করে। যদি স্পর্শ করে, তবে জীবাণু লেগে ড্রপটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ড্রপ ফেলার পর আলতো করে চোখ বন্ধ করুন এবং চোখের ভিতরের কোণে ১-২ মিনিট হালকা চাপ দিয়ে ধরে রাখুন। এতে করে ড্রপ চোখের অশ্রু নালী দিয়ে গলায় চলে যাওয়া প্রতিরোধ হয় এবং ড্রপ চোখের ভেতরে ভালোভাবে কাজ করতে পারে। বাড়তি ড্রপ টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলুন। ড্রপ ব্যবহারের পর বোতলের ঢাকনা ভালোভাবে বন্ধ করে রাখুন।
ড্রপের সংরক্ষণ এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ
চোখের ড্রপের সঠিক সংরক্ষণ পদ্ধতি এর কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। বেশিরভাগ চোখের ড্রপ ঠান্ডা ও শুষ্ক জায়গায় আলো থেকে দূরে সংরক্ষণ করতে হয়। কিছু বিশেষ ড্রপ আছে যা রেফ্রিজারেটরে রাখতে হয়, তাই ব্যবহারের আগে প্যাকেজিং-এর নির্দেশাবলী ভালোভাবে পড়ে নিন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ড্রপের মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ। একবার ড্রপের বোতল খোলার পর, বেশিরভাগ ড্রপ ২৮ দিন বা এক মাসের মধ্যে ব্যবহার করা উচিত, এমনকি বোতলের গায়ে দীর্ঘ মেয়াদ লেখা থাকলেও। কারণ বোতল খোলার পর বাতাসে থাকা জীবাণু ড্রপের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে এবং সময়ের সাথে সাথে ড্রপ দূষিত হয়ে যেতে পারে। আমার অভিজ্ঞতা বলে, বোতল খোলার তারিখটি বোতলের গায়ে লিখে রাখাটা খুব ভালো অভ্যাস। মেয়াদ উত্তীর্ণ ড্রপ বা একবার খোলা ড্রপ এক মাসের বেশি ব্যবহার করলে চোখের সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তাই পুরনো বা মেয়াদ উত্তীর্ণ ড্রপ নির্দ্বিধায় ফেলে দিন এবং নতুন ড্রপ ব্যবহার করুন।
প্রাকৃতিক উপায়ে চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা
আমরা এতক্ষণ চোখের সমস্যা হলে কী কী ড্রপ ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে কথা বললাম। তবে আমার ব্যক্তিগত মতে, সমস্যা হওয়ার আগেই যদি আমরা কিছু প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করে চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারি, তাহলে সেটা সবচেয়ে ভালো হয়। আমার দাদি সবসময় বলতেন, শরীর সুস্থ থাকলে চোখও সুস্থ থাকবে। আর সত্যিই তো, আমাদের দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস আর প্রাকৃতিক জিনিসপত্র ব্যবহার করে আমরা চোখের উজ্জ্বলতা এবং কার্যকারিতা অনেকটাই বাড়িয়ে তুলতে পারি। শুধু ড্রপের ওপর নির্ভর না করে, বরং প্রাকৃতিক পদ্ধতির সাথে আধুনিক চিকিৎসার একটা ভারসাম্য তৈরি করা উচিত। এই পদ্ধতিগুলো নিরাপদ, সাশ্রয়ী এবং দীর্ঘমেয়াদী উপকার দিতে পারে।
চোখের জন্য উপকারী প্রাকৃতিক উপাদান
প্রকৃতিতে এমন অনেক উপাদান আছে যা আমাদের চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। আমি দেখেছি, অনেকে চোখের ক্লান্তি দূর করতে শসা বা আলুর পাতলা স্লাইস চোখের ওপর রাখেন। শসায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ঠান্ডা প্রভাব চোখকে আরাম দেয় এবং ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে। গ্রিন টি ব্যাগও এক্ষেত্রে দারুণ কার্যকর। গ্রিন টিতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখের নিচে ফোলাভাব এবং কালো দাগ কমাতে সাহায্য করে। ব্যবহার করা ঠান্ডা গ্রিন টি ব্যাগ কিছুক্ষণ চোখের ওপর রাখলে চোখে আরাম পাওয়া যায়। এছাড়াও, গোলাপজল চোখের জন্য একটি প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে কাজ করে এবং চোখ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। তবে গোলাপজল ব্যবহারের আগে নিশ্চিত করুন যে এটি বিশুদ্ধ এবং রাসায়নিক মুক্ত। আমার দাদি সবসময় চোখে তুলো দিয়ে গোলাপজল লাগাতেন আর বলতেন এতে চোখ পরিষ্কার থাকে।
জীবনযাত্রার মাধ্যমে চোখের যত্ন
শুধু বাহ্যিক যত্নই নয়, আমাদের জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তনও চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পর্যাপ্ত ঘুম চোখের জন্য প্রাকৃতিক নিরাময় হিসেবে কাজ করে। ঘুমের সময় চোখ বিশ্রাম পায় এবং নিজেকে সতেজ করে তোলে। আমি দেখেছি, যেদিন আমার ঘুম কম হয়, সেদিন চোখ অনেক ক্লান্ত আর শুষ্ক লাগে। এছাড়া, নিয়মিত চোখের ব্যায়ামও দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং চোখের পেশীগুলোকে শক্তিশালী করে। যেমন, চোখ ঘুরানো, কাছের ও দূরের জিনিসের দিকে তাকানো বা চোখ বন্ধ করে হালকা ম্যাসাজ করা। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করাও খুব জরুরি, কারণ শরীরকে হাইড্রেটেড রাখলে চোখের শুষ্কতার সমস্যা কমে। সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি থেকে চোখকে রক্ষা করার জন্য বাইরে বের হলে ভালো মানের সানগ্লাস ব্যবহার করা উচিত। এই প্রাকৃতিক এবং জীবনযাত্রা ভিত্তিক পদ্ধতিগুলো আমাদের চোখের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
글을মাচিয়ে
বন্ধুরা, আমাদের চোখ যে কতটা অমূল্য সম্পদ, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করার জন্য সুস্থ দৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। এই পোস্টে আমরা চোখের সুরক্ষায় নিয়মিত যত্ন থেকে শুরু করে শুষ্ক চোখের সমস্যা, অ্যালার্জি, সংক্রমণ এবং ড্রপের সঠিক ব্যবহার পর্যন্ত অনেক কিছু নিয়ে কথা বললাম। আমার অভিজ্ঞতা বলে, এই আলোচনাগুলো আপনাদের চোখকে আরও ভালোভাবে বুঝতে এবং এর যত্ন নিতে সাহায্য করবে। মনে রাখবেন, চোখ ভালো থাকলে আপনার জীবনযাত্রার মানও উন্নত হবে, কারণ বাইরের দুনিয়ার সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করতে হলে সুস্থ চোখের জুড়ি মেলা ভার। তাই আর দেরি না করে, আজ থেকেই চোখের যত্নে আরও সচেতন হোন। ছোট ছোট অভ্যাস পরিবর্তনই আপনার চোখের দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতার চাবিকাঠি। আশা করি, আমার এই ব্লগ পোস্টটি আপনাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছুটা হলেও উপকারে আসবে এবং আপনারা চোখকে আরও বেশি ভালোবাসতে শিখবেন। এই যাত্রায় আমরা সবাই একসঙ্গে থাকব, চোখ ভালো রাখব!
আল্লাওজানাওয়ান সেমলু এইনা সুপর্ণা
1. চোখের নিয়মিত চেকআপ করান: বছরে অন্তত একবার চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যান, এমনকি যদি আপনার চোখে কোনো সমস্যা নাও থাকে। এটি প্রাথমিক পর্যায়ে যেকোনো সমস্যা ধরতে সাহায্য করবে।
2. স্ক্রিন টাইম কমান এবং ২০-২০-২০ নিয়ম মেনে চলুন: মোবাইল, কম্পিউটার বা ল্যাপটপে একটানা কাজ করার সময় প্রতি ২০ মিনিট পর পর ২০ ফুট দূরে ২০ সেকেন্ডের জন্য তাকিয়ে থাকুন। এটি চোখের ক্লান্তি কমায়।
3. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন: ভিটামিন এ, সি, ই এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন গাজর, পালংশাক, রঙিন ফলমূল ও মাছ বেশি করে খান। এটি চোখের পুষ্টি যোগায়।
4. চোখের ড্রপের সঠিক ব্যবহার ও সংরক্ষণ জানুন: চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ড্রপ ব্যবহার করবেন না। ব্যবহারের আগে হাত ধুন, মেয়াদ উত্তীর্ণ ড্রপ ব্যবহার করবেন না এবং খোলার এক মাসের মধ্যে ড্রপ শেষ করার চেষ্টা করুন।
5. পরিবেশগত সুরক্ষা নিশ্চিত করুন: বাইরে বের হলে ধুলো, বালি এবং সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে চোখকে রক্ষা করতে ভালো মানের সানগ্লাস ব্যবহার করুন। ঘরে পর্যাপ্ত আলো নিশ্চিত করুন এবং বায়ু দূষণ থেকে চোখকে বাঁচান।
জান্তিয়া সাস্থা সংগ্রম
চোখের যত্ন শুধুমাত্র একটি কাজ নয়, এটি একটি জীবনযাত্রার অংশ। আমরা দেখলাম কীভাবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত বিশ্রাম এবং পরিবেশগত সুরক্ষা আমাদের চোখের স্বাস্থ্যের ভিত্তি তৈরি করে। স্ক্রিনের অতিরিক্ত ব্যবহার এড়ানো এবং ২০-২০-২০ নিয়ম মেনে চলা আধুনিক জীবনের জন্য অপরিহার্য। অ্যালার্জি বা শুষ্ক চোখের মতো সাধারণ সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ড্রপ ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ ভুল ড্রপ উল্টো ক্ষতির কারণ হতে পারে। সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া জরুরি, কারণ সময়মতো চিকিৎসা না করালে দৃষ্টিশক্তির মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা যেমন চোখে হাত দেওয়ার আগে হাত ধোয়া এবং কন্টাক্ট লেন্সের সঠিক ব্যবহার সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। মনে রাখবেন, আপনার চোখ দুটো আপনার জীবনের জানালা, তাই এর যত্ন নিন এবং সুস্থ থাকুন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖
প্র: সামান্য চোখ লাল হলেই কি ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত? ঘরে রাখা কোনো সাধারণ ড্রপ ব্যবহার করা কি ঠিক নয়?
উ: আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, অনেক সময় আমরা ভাবি ‘আরে বাবা, সামান্য চোখ লাল হয়েছে, কোনো ব্যাপার না!’ আর তখনই ভুলটা করে বসি। সামান্য চোখ লাল হওয়াটা কোনো সাধারণ অ্যালার্জি হতে পারে, আবার কোনো গুরুতর সংক্রমণের লক্ষণও হতে পারে। আমি একবার ভেবেছিলাম আমার চোখে ধুলো ঢুকেছে, তাই একটা পরিচিত ফার্মেসী থেকে একটা ড্রপ কিনে ব্যবহার করা শুরু করেছিলাম। কিন্তু দুদিন পর দেখি অবস্থা আরও খারাপ। পরে ডাক্তারের কাছে গিয়ে জানলাম, সেটা আসলে একটা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন ছিল, আর আমার ব্যবহার করা ড্রপটা সেটাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। তাই বন্ধু, সামান্য লাল হলেও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ড্রপ ব্যবহার করা একদমই উচিত নয়। আমাদের চোখ খুবই সংবেদনশীল, ভুলভাল কিছু ব্যবহার করলে উল্টো বিপদ হতে পারে। একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারই বলে দিতে পারবেন আপনার চোখের সমস্যাটা আসলে কী এবং কোন ড্রপ আপনার জন্য সুরক্ষিত ও কার্যকর হবে। এতে একদিকে যেমন আপনার চোখের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি কমে, তেমনি সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা পেয়ে আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।
প্র: বাজারে তো অনেক ধরনের চোখের ড্রপ দেখা যায়, যেমন – অ্যালার্জির জন্য, শুষ্ক চোখের জন্য, বা সংক্রমণের জন্য। কিন্তু সাধারণ মানুষ হিসাবে আমরা বুঝব কীভাবে কোনটা কখন ব্যবহার করব?
উ: সত্যি বলতে কি, এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। আমিও প্রথমদিকে এই একই সমস্যায় ভুগেছি। যখন চোখ চুলকাতো, ভাবতাম অ্যালার্জি, তাই অ্যালার্জির ড্রপ ব্যবহার করতাম। কিন্তু দেখা যেত সবসময় কাজ করত না। আসলে, চোখে বিভিন্ন কারণে সমস্যা হতে পারে। যেমন, এখনকার ডিজিটাল যুগে স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অনেকেরই চোখ শুষ্ক হয়ে যায়, তখন ‘লুব্রিকেটিং ড্রপস’ বা ‘আর্টিফিশিয়াল টিয়ার্স’ প্রয়োজন হয়। আবার, যদি চোখে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের কারণে সংক্রমণ হয়, তাহলে প্রয়োজন অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিভাইরাল ড্রপ। অ্যালার্জির কারণে চোখ লাল হলে বা চুলকালে আবার ‘অ্যান্টিহিস্টামিন ড্রপস’ ব্যবহার করতে হয়। প্রতিটি ড্রপের কার্যকারিতা এবং উপাদান ভিন্ন। আমার পরামর্শ হলো, নিজের মনগড়া সিদ্ধান্তে কোনো ড্রপ ব্যবহার না করে, চোখ বিশেষজ্ঞের কাছে যান। তিনি আপনার চোখের অবস্থা পরীক্ষা করে ঠিক কী ধরনের ড্রপ আপনার প্রয়োজন, সেটা বলে দেবেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, সঠিক ড্রপ সঠিক সময়ে ব্যবহার করলে সমস্যা দ্রুত কমে যায় এবং কোনো জটিলতা সৃষ্টি হয় না।
প্র: আমরা তো সারাদিন কম্পিউটার, ফোন ব্যবহার করি বা বাইরে বেরোই। চোখকে এই অতিরিক্ত চাপ আর দূষণ থেকে বাঁচানোর জন্য নিয়মিত ড্রপ ব্যবহার করা ছাড়া আর কী কী করতে পারি?
উ: খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন! শুধু ড্রপ ব্যবহার করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না, চোখকে সুস্থ রাখতে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছু অভ্যাস গড়ে তোলা খুব জরুরি। আমি নিজে এই নিয়মগুলো মেনে চলি এবং দেখেছি এতে চোখ অনেক সতেজ থাকে। প্রথমত, ‘২০-২০-২০’ নিয়মটা মেনে চলুন – প্রতি ২০ মিনিট পর পর ২০ ফুট দূরের কোনো কিছুর দিকে ২০ সেকেন্ডের জন্য তাকিয়ে থাকুন। এতে চোখের পেশিগুলো আরাম পায় এবং স্ক্রিন থেকে চোখ সরে যাওয়ার কারণে শুষ্কতা কমে। দ্বিতীয়ত, যথেষ্ট পরিমাণে জল পান করুন, কারণ শরীর ডিহাইড্রেটেড থাকলে চোখও শুষ্ক হতে পারে। তৃতীয়ত, যখন বাইরে যাবেন, বিশেষ করে ধুলোবালি বা তীব্র রোদে, তখন ভালো মানের সানগ্লাস ব্যবহার করুন। এটা শুধু রোদ থেকে নয়, ধুলো এবং ইউভি রশ্মি থেকেও চোখকে বাঁচায়। চতুর্থত, রাতে ঘুমানোর আগে ফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এর নীল আলো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় এবং চোখের উপর চাপ ফেলে। আর নিয়মিত চোখের ব্যায়াম করতে পারেন, যেমন চোখ ঘোরানো বা পলক ফেলা। এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো আপনার চোখকে প্রতিদিনের চাপ আর দূষণ থেকে অনেকটাই রক্ষা করবে। বিশ্বাস করুন, এই অভ্যাসগুলো আমার চোখকে অনেকটাই ভালো রেখেছে।






