চোখের অপারেশন, বিশেষ করে ছানি অপারেশন অথবা ল্যাসিক সার্জারির পরে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলাটা খুবই জরুরি। আমি নিজে যখন ল্যাসিক করিয়েছিলাম, তখন ডাক্তারবাবু খুব স্পষ্ট করে কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেই সময় মনে হয়েছিল, “এগুলো তো সবাই জানে!” কিন্তু পরে বুঝলাম, ছোটখাটো ভুলের জন্যেও অনেক সমস্যা হতে পারে।যেমন ধরুন, প্রথম কয়েকদিন চোখে জলের ঝাপটা দেওয়া বারণ, তেমনি ধুলোবালি থেকেও বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন। রাতের বেলা ঘুমোনোর সময় চোখের ওপর একটা প্রোটেক্টিভ শিল্ড ব্যবহার করতে হয়, যাতে ঘুমের মধ্যে হাত লেগে চোখ না ঘষা হয়ে যায়। এছাড়াও, নিয়মিত prescribed ড্রপগুলো ব্যবহার করাটা খুব দরকার।আসলে, চোখের ব্যাপার তো, তাই একটু বেশি সাবধান থাকা ভালো। তাহলে চলুন, এই বিষয়ে আরও কিছু খুঁটিনাটি বিষয় জেনে নেওয়া যাক, যাতে আপনার recovery period টা সহজ হয়। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
অপারেশনের পরের দিনগুলো: কী কী পরিবর্তন আসে

প্রথম ২৪ ঘণ্টা: যত্নে থাকুন
চোখের অপারেশনের পর প্রথম ২৪ ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টাতে চোখে চাপ দেওয়া বা ঘষা একেবারেই উচিত নয়। আমি যখন ল্যাসিক করিয়েছিলাম, তখন প্রথম রাতে ঘুমোনোটা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। ঘুমের মধ্যে হাত চলে যাচ্ছিল চোখের দিকে!
তাই ডাক্তারবাবুর দেওয়া প্রোটেক্টিভ শিল্ডটা খুব কাজে দিয়েছিল। চেষ্টা করুন, প্রথম দিনটা বিশ্রাম নিতে এবং টিভি, মোবাইল বা কম্পিউটারের স্ক্রিন থেকে দূরে থাকতে। হালকা খাবার খান এবং প্রচুর জল পান করুন। কোনো রকম অস্বস্তি হলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা আমার মনে আছে, সবকিছু ঝাপসা লাগছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে সেটা ঠিক হয়ে যায়।
ব্যথানাশক ওষুধ ও ড্রপ ব্যবহার
অপারেশনের পর ডাক্তার হয়তো কিছু ব্যথানাশক ওষুধ এবং চোখের ড্রপ দেবেন। ড্রপগুলো সময় মতো ব্যবহার করা খুব জরুরি। কোনো ড্রপ ব্যবহারের আগে অবশ্যই ভালো করে হাত ধুয়ে নেবেন। ড্রপ দেওয়ার সময় খেয়াল রাখবেন, ড্রপের মুখ যেন চোখের পাতার সাথে না লাগে। ওষুধ এবং ড্রপগুলো আপনার চোখের দ্রুত সেরে ওঠাতে সাহায্য করবে এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষা করবে। আমার মনে আছে, প্রথম কয়েকদিন ড্রপ দেওয়ার সময় একটু অস্বস্তি হতো, কিন্তু পরে অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল।
দৈনন্দিন জীবনে সতর্কতা: জরুরি কিছু টিপস
আলো এবং ধুলোবালি থেকে সাবধান
অপারেশনের পর কয়েকদিন সরাসরি সূর্যের আলোতে যাওয়া উচিত নয়। বাইরে বেরোলে সানগ্লাস ব্যবহার করুন। ধুলোবালি থেকেও চোখকে বাঁচিয়ে রাখা দরকার। যারা বাইকে চড়ে অভ্যস্ত, তাদের জন্য হেলমেট পরাটা মাস্ট। এছাড়া, ঘরেও যদি ধুলোবালি থাকে, তাহলে নিয়মিত ঘর পরিষ্কার করুন। আমি যখন ল্যাসিক করিয়েছিলাম, তখন কয়েকদিন ঘরের বাইরে বের হইনি, আর যখন বেরিয়েছি, সানগ্লাস ছাড়া একদম না।
স্ক্রিন টাইম কমানো
কম্পিউটার বা মোবাইলের স্ক্রিনে বেশি সময় ধরে তাকিয়ে থাকলে চোখের ওপর চাপ পড়ে। তাই অপারেশনের পর প্রথম কয়েকদিন স্ক্রিন টাইম কমানো উচিত। যদি কাজ করতে হয়, তাহলে প্রতি ২০ মিনিট পর পর একটু ব্রেক নিন এবং চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম করুন। স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখলে চোখের ওপর কম চাপ পড়বে। আমি কাজের সময় প্রতি ঘন্টায় ৫ মিনিটের একটা ব্রেক নিতাম, আর সেই সময়টাতে চোখ বন্ধ করে রাখতাম।
খাবার এবং পানীয়: কী খাবেন, কী এড়িয়ে চলবেন
ভিটামিন ও মিনারেলস সমৃদ্ধ খাবার
অপারেশনের পর শরীরকে দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে ভিটামিন ও মিনারেলস সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া খুব জরুরি। ভিটামিন এ, সি এবং ই চোখের জন্য খুবই উপকারী। তাই গাজর, পালং শাক, কমলালেবু, বাদাম এবং বীজ জাতীয় খাবার বেশি করে খান। প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন, যা আপনার শরীরকে ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করবে।
যা এড়িয়ে চলা উচিত
অ্যালকোহল এবং ধূমপান চোখের জন্য ক্ষতিকর। তাই অপারেশনের পর এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। এছাড়া, অতিরিক্ত চিনি এবং ফ্যাট জাতীয় খাবারও পরিহার করা ভালো। জাঙ্ক ফুড এবং প্রসেসড ফুড শরীরের recovery-এর গতি কমিয়ে দেয়। আমি অপারেশনের পর কয়েক সপ্তাহ জাঙ্ক ফুড থেকে দূরে ছিলাম এবং হেলদি ডায়েট ফলো করেছিলাম।
ঘুম এবং বিশ্রাম: সঠিক নিয়ম
পর্যাপ্ত ঘুমের গুরুত্ব
অপারেশনের পর পর্যাপ্ত ঘুম খুবই জরুরি। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। ঘুমের সময় চোখের ওপর কোনো চাপ দেওয়া যাবে না। চিৎ হয়ে ঘুমানো ভালো, যাতে চোখের ওপর সরাসরি চাপ না পড়ে। রাতের বেলা ঘুমানোর সময় চোখের ওপর প্রোটেক্টিভ শিল্ড ব্যবহার করুন, যাতে ঘুমের মধ্যে হাত লেগে চোখ না ঘষা হয়ে যায়।
বিশ্রামের নিয়ম
দিনের বেলাতেও কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া দরকার। কাজের ফাঁকে চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিন অথবা কিছুক্ষণ প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে থাকুন। এতে চোখের পেশীগুলো রিল্যাক্স হবে এবং ক্লান্তি দূর হবে। আমি কাজের মাঝে মাঝে বারান্দায় গিয়ে দূরের গাছপালা দেখতাম, এতে চোখ শান্তি পেত।
| বিষয় | করণীয় | কী পরিহার করবেন |
|---|---|---|
| প্রথম ২৪ ঘণ্টা | বিশ্রাম, প্রোটেক্টিভ শিল্ড ব্যবহার, ডাক্তারের পরামর্শ | চোখ ঘষা, স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকা |
| খাবার | ভিটামিন ও মিনারেলস সমৃদ্ধ খাবার, প্রচুর জল | অ্যালকোহল, ধূমপান, জাঙ্ক ফুড |
| ঘুম | ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম, চিৎ হয়ে ঘুমানো | পেটের ওপর ভর দিয়ে ঘুমানো |
| আলো ও ধুলো | সানগ্লাস ব্যবহার, ঘর পরিষ্কার রাখা | সরাসরি সূর্যের আলো, ধুলোবালি |
ডাক্তারের পরামর্শ: কখন যোগাযোগ করবেন
নিয়মিত ফলো-আপ
অপারেশনের পর ডাক্তারের সঙ্গে নিয়মিত ফলো-আপে থাকা খুব জরুরি। ডাক্তার আপনার চোখের অবস্থা পরীক্ষা করে দেখবেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পরামর্শ দেবেন। ফলো-আপ অ্যাপয়েন্টমেন্টগুলো মিস করা উচিত নয়।
জরুরি লক্ষণ
যদি আপনি চোখের দৃষ্টিতে কোনো পরিবর্তন দেখেন, যেমন ঝাপসা দেখা, ব্যথা, লাল হয়ে যাওয়া বা আলোতে সংবেদনশীলতা, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এছাড়াও, যদি চোখের চারপাশে ফোলাভাব বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখেন, তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আমার এক পরিচিতজনের অপারেশনের পর হঠাৎ করে চোখে ব্যথা শুরু হয়েছিল, তিনি সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন।
যোগাযোগের নিয়মকানুন: কী জানতে হবে
চোখ রগড়ানো নিষেধ
* অপারেশনের পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ চোখ রগড়ানো নিষেধ। চোখে চুলকানি হলে বা অস্বস্তি লাগলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আই ড্রপ ব্যবহার করুন।
সাঁতার পরিহার করুন
* অপারেশনের পর সাঁতার কাটা বা সুইমিং পুল এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ সুইমিং পুলের জলে ক্লোরিন থাকে যা চোখের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
অন্যান্য সতর্কতা
* মেকআপ ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
* ভারী জিনিস তোলা বা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করা উচিত নয়।
* ধোঁয়া বা দূষিত বাতাস থেকে দূরে থাকুন।
* কমপক্ষে দুই সপ্তাহ টিভি এবং কম্পিউটার থেকে দূরে থাকুন অথবা কম দেখুন।
* চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ ব্যবহার করবেন না।এই নিয়মগুলো মেনে চললে আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন এবং আপনার দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকবে। মনে রাখবেন, চোখের যত্ন নেওয়াটা খুবই জরুরি।
শেষ কথা
অপারেশনের পরের দিনগুলো একটু কঠিন হতে পারে, তবে সঠিক যত্ন এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে খুব সহজেই সুস্থ হয়ে ওঠা যায়। নিজের চোখের প্রতি যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন। কোনো সমস্যা হলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে দ্বিধা করবেন না। আপনার সুস্থতাই আমাদের কাম্য।
দরকারি কিছু তথ্য
১. চোখের ড্রপ দেওয়ার সময় হাতের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
২. সানগ্লাস সবসময় সাথে রাখুন, বিশেষ করে দিনের বেলায়।
৩. কম্পিউটার ব্যবহারের সময় নিয়মিত বিরতি নিন।
৪. ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার আপনার চোখের জন্য খুবই উপকারী।
৫. পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং ওষুধ ব্যবহার করুন। আলো ও ধুলো থেকে চোখকে বাঁচিয়ে চলুন। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত ঘুম আপনার দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য জরুরি। কোনো রকম জটিলতা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖
প্র: চোখের অপারেশনের পর কতদিন পর্যন্ত ভারী কাজ করা উচিত না?
উ: চোখের অপারেশনের পর অন্তত এক সপ্তাহ ভারী কাজ করা উচিত না। প্রথম কয়েকদিন বিশ্রাম নেওয়াটা খুব জরুরি, যাতে চোখের ওপর কোনো চাপ না পড়ে। আমি যখন ল্যাসিক করিয়েছিলাম, ডাক্তারবাবু আমাকে দুই সপ্তাহ কোনো ভারী জিনিস তুলতে বারণ করেছিলেন।
প্র: অপারেশনের পর চোখের ড্রপগুলো কতদিন ব্যবহার করতে হবে?
উ: চোখের ড্রপ কতদিন ব্যবহার করতে হবে, তা ডাক্তারের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত, কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত ড্রপ ব্যবহার করতে হতে পারে। আমার ক্ষেত্রে, ডাক্তারবাবু তিন মাস ধরে বিভিন্ন ধরনের ড্রপ ব্যবহার করতে বলেছিলেন। নিয়মিত ড্রপ ব্যবহার না করলে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
প্র: অপারেশনের পর কি টিভি দেখা বা মোবাইল ব্যবহার করা যায়?
উ: অপারেশনের পর প্রথম কয়েকদিন টিভি দেখা বা মোবাইল ব্যবহার করা উচিত না। চোখের ওপর বেশি চাপ পড়লে recovery-তে সমস্যা হতে পারে। তবে, ধীরে ধীরে অল্প সময়ের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। আমি প্রথম সপ্তাহে শুধু গান শুনতাম আর হালকা বই পড়তাম, মোবাইল একদম ব্যবহার করিনি।
📚 তথ্যসূত্র
Wikipedia Encyclopedia
구글 검색 결과
구글 검색 결과
구글 검색 결과
구글 검색 결과
구글 검색 결과






