মায়োপিয়া ও অ্যাস্টিগম্যাটিজম: আপনার চোখ নিয়ে ভুল বোঝার দিন শেষ, আসল পার্থক্য জানুন!

webmaster

근시와 난시 차이 - **Prompt for Myopia (Nearsightedness - difficulty seeing distant objects):**
    "A young child, app...

আমরা যারা আধুনিক ডিজিটাল যুগে বাস করছি, তাদের চোখের ওপর চাপটা অনেক বেড়ে গেছে, তাই না? বিশেষ করে স্মার্টফোন আর কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ যে কখন ক্লান্ত হয়ে যায়, টেরও পাই না। চারপাশে এত মানুষের চোখে চশমা দেখছি, ভাবি এটা কি শুধু বয়স বাড়ার লক্ষণ, নাকি এর পেছনে আরও কিছু কারণ আছে?

আমার নিজের অভিজ্ঞতাতেও দেখেছি, একটানা স্ক্রিন দেখলে দূর বা কাছের জিনিস দেখতে কেমন যেন ঝাপসা লাগে, মাথাটাও ধরে ওঠে। এই সমস্যাগুলো কিন্তু খুব সাধারণ, আর এর মধ্যে দুটো প্রধান কারণ হলো মায়োপিয়া (Myopia) বা অদূরদৃষ্টি এবং অ্যাস্টিগম্যাটিজম (Astigmatism) বা বিষমদৃষ্টি। অনেকেই হয়তো ভাবেন, দুটোই তো চোখের সমস্যা, নিশ্চয়ই একই রকম কিছু হবে?

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এদের কারণ আর লক্ষণে বেশ কিছু সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে, যা জেনে রাখাটা সত্যিই জরুরি। বিশেষ করে আজকাল ছোটদের মধ্যেও স্ক্রিন আসক্তির কারণে চোখের নানা সমস্যা বাড়ছে, যা রীতিমতো উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দুটো সমস্যার মধ্যে আসলে কী ধরনের ফারাক আছে, কোনটা আপনার জন্য বেশি চিন্তার, আর কীভাবে বুঝবেন আপনার চোখে ঠিক কোন সমস্যাটি হচ্ছে – এ সবকিছুই কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য খুব প্রয়োজনীয় তথ্য। নিজের চোখের যত্ন নেওয়ার প্রথম ধাপই হলো সমস্যাটা ঠিকভাবে চিনে নেওয়া। চলুন, তাহলে দেরি না করে এই বিষয়ে একদম খুঁটিনাটি জেনে নিই।

চোখের এই গোলকধাঁধা: মায়োপিয়া ও অ্যাস্টিগম্যাটিজম ঠিক কী?

근시와 난시 차이 - **Prompt for Myopia (Nearsightedness - difficulty seeing distant objects):**
    "A young child, app...

অদূরদৃষ্টি: দূরের পৃথিবী কেন ঝাপসা?

আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, দূরে থাকা সাইনবোর্ডের লেখা যখন ঝাপসা লাগা শুরু করলো, তখন প্রথমবার মনে হয়েছিল, “হায় রে, বয়স কি তবে বাড়ছে?” এই যে দূরের জিনিস স্পষ্ট দেখতে না পাওয়ার সমস্যা, এর ডাক্তারি নাম হলো মায়োপিয়া বা অদূরদৃষ্টি। ব্যাপারটা এমন যে, আমাদের চোখের অক্ষিগোলকটা যদি স্বাভাবিকের চেয়ে একটু লম্বা হয়, অথবা কর্নিয়া বা লেন্সটা যদি অতিরিক্ত বাঁকা হয়, তাহলে বাইরের আলোকরশ্মি রেটিনায় পৌঁছানোর আগেই ফোকাস হয়ে যায়। ফলে রেটিনার ওপর একটা স্পষ্ট ছবি তৈরি না হয়ে, একটা ঝাপসা ছবি তৈরি হয়। এর কারণে দূরের কোনো বস্তুকে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই না, যেন মেঘলা দিনে দূরের পাহাড় দেখছি। আমার মনে আছে, প্রথম দিকে শুধু রাতে গাড়ি চালাতে সমস্যা হচ্ছিল, সামনের হেডলাইটের আলো কেমন যেন ছড়িয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু পরে যখন দিনের বেলায়ও বোর্ডের লেখা পড়তে সমস্যা হতে শুরু করল, তখন ডাক্তারের কাছে যেতে হলো। এই মায়োপিয়া আজকাল ছোটদের মধ্যে খুব বেশি দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে যারা স্মার্টফোন আর ট্যাব নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটায়। আমার এক ভাগ্নেরও একই সমস্যা হয়েছে, সে নাকি ক্লাসের ব্ল্যাকবোর্ডের লেখা দেখতে পেত না। এটা কিন্তু শুধু দেখার সমস্যা নয়, এতে মাথা ব্যথা, চোখের ওপর চাপ পড়া এবং মনোযোগের অভাবের মতো সমস্যাও হতে পারে।

বিষমদৃষ্টি: কেন বাঁকা দেখাচ্ছে সবকিছু?

অ্যাস্টিগম্যাটিজম বা বিষমদৃষ্টির ব্যাপারটা আরও একটু অন্যরকম। যখন আমার একজন বন্ধু আমাকে বলেছিল যে, সে নাকি সোজা রেখাকেও বাঁকা দেখে, আর আলোর চারপাশে একটা অদ্ভুত আভা দেখে, তখন আমি এই সমস্যাটা সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি। আমার কাছে এটা খুবই অদ্ভুত লেগেছিল। পরে ডাক্তার বলেছিলেন, অ্যাস্টিগম্যাটিজম হয় মূলত কর্নিয়া বা চোখের লেন্সের পৃষ্ঠে অসম বক্রতার কারণে। সহজভাবে বলতে গেলে, আমাদের চোখের কর্নিয়াটা সাধারণত ফুটবলের মতো গোলাকার হয়, কিন্তু অ্যাস্টিগম্যাটিজমে সেটা রাগবি বলের মতো কিছুটা ডিম্বাকার হয়ে যায়। এর ফলে আলোক রশ্মিগুলো চোখের মধ্যে প্রবেশের পর রেটিনার ওপর একটি ফোকাস পয়েন্টে না এসে বিভিন্ন ফোকাস পয়েন্টে ছড়িয়ে পড়ে। এর মানে হলো, চোখ একই সময়ে উল্লম্ব এবং অনুভূমিক উভয় তলে ফোকাস করতে পারে না। যার ফলস্বরূপ কাছে এবং দূরের উভয় বস্তুই ঝাপসা এবং বিকৃত দেখায়। আমার বন্ধুটি আরও বলেছিল যে, রাতের বেলায় আলোর চারপাশে একটা লম্বাটে রেখা বা স্টারবার্স্ট ইফেক্ট দেখত, যা গাড়ি চালানোর সময় খুবই বিপজ্জনক ছিল। এটা শুধু ঝাপসা দেখায় না, অনেক সময় অক্ষরগুলোও কেমন যেন ছড়িয়ে যায় বা ডাবল ইমেজ দেখা যায়। তাই, এই সমস্যার সাথে বসবাস করাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।

আমাদের চোখ কেন এমন আচরণ করে? নেপথ্যের কারণগুলো কী?

জিনগত কারণ ও পরিবেশের প্রভাব

আমরা অনেকেই হয়তো জানি না যে, চোখের এই ধরনের সমস্যার পেছনে জিনগত কারণও থাকতে পারে। আমার দাদু, বাবারও চশমা ছিল, আর এখন আমারও চশমা। এতে বোঝা যায়, বংশগত প্রভাবটা কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যদি বাবা-মায়ের দুজনেরই মায়োপিয়া থাকে, তাহলে সন্তানেরও মায়োপিয়া হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। তবে শুধু জিনগত কারণই নয়, আমাদের বর্তমান জীবনযাপনও এই সমস্যাগুলোকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। চোখের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করা কাজ, যেমন ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকা, কম আলোতে পড়াশোনা করা, অথবা পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক আলোতে সময় না কাটানো – এ সবকিছুই চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আজকাল শহরাঞ্চলে ছোট বাচ্চাদের মধ্যে এই প্রবণতা অনেক বেশি দেখা যায়, কারণ তারা খেলার মাঠের চেয়ে ডিজিটাল স্ক্রিনে বেশি সময় কাটায়। আমার মনে আছে, ছোটবেলায় আমরা সারাদিন বাইরে খেলাধুলা করতাম, কিন্তু এখনকার শিশুরা বেশিরভাগ সময় indoors থাকে, যা চোখের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য মোটেও ভালো নয়।

জীবনযাত্রার পরিবর্তন: এক নীরব হুমকি

বর্তমান সময়ে আমাদের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন এসেছে, যা আমাদের চোখের জন্য একটি নীরব হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার মনে পড়ে, ছোটবেলায় বই পড়া বা টেলিভিশন দেখার একটা নির্দিষ্ট সময় ছিল। কিন্তু এখন ২৪ ঘণ্টা আমাদের হাতে স্মার্টফোন থাকে, যা থেকে আমরা কাজ করি, বিনোদন খুঁজি, এমনকি সামাজিক যোগাযোগও করি। এই একটানা স্ক্রিন ব্যবহারের ফলে চোখকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কাজ করতে হয়, যা চোখের পেশিগুলোর উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে। এর ফলে চোখের শুষ্কতা, ক্লান্তি এবং দৃষ্টিশক্তির সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে যখন সবকিছু অনলাইন হয়ে গিয়েছিল, তখন আমি নিজেও দেখেছি আমার চোখে কতটা চাপ বেড়েছিল। চোখের এই অতিরিক্ত ব্যবহার চোখের ফোকাসিং ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে এবং দীর্ঘমেয়াদে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস করতে পারে। এর পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবারের অভাব, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া এবং চোখের সঠিক যত্ন না নেওয়াও এই সমস্যাগুলোকে আরও জটিল করে তোলে।

Advertisement

লক্ষণ চিনবেন কীভাবে? কখন বুঝবেন ডাক্তারের কাছে যাওয়া জরুরি?

অদূরদৃষ্টির লক্ষণ: কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন?

মায়োপিয়ার লক্ষণগুলো সাধারণত বেশ স্পষ্ট হয়, বিশেষ করে দূরের জিনিস দেখতে যখন সমস্যা হয়। আমার নিজের ক্ষেত্রে, প্রথমে দেখতাম দূরের যানবাহনের নাম্বার প্লেট পড়তে সমস্যা হচ্ছে, পরে সিনেমা হলের স্ক্রিনের লেখাগুলোও ঝাপসা লাগত। এই সমস্যাগুলো যখন দৈনন্দিন জীবনে ব্যাঘাত ঘটাতে শুরু করবে, তখনই বুঝতে হবে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময় হয়েছে। অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে – দূরের জিনিস দেখার জন্য চোখ কুঁচকানো, টেলিভিশন বা কম্পিউটারের স্ক্রিনের কাছে গিয়ে বসা, আলোর চারপাশে একটা আভা দেখা, এবং দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনে তাকানোর পর মাথা ব্যথা বা চোখের ক্লান্তি অনুভব করা। ছোটদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা ব্ল্যাকবোর্ডের লেখা দেখতে পায় না, খেলার সময় বল বা বস্তুর দূরত্ব বুঝতে ভুল করে, অথবা বই মুখের খুব কাছে এনে পড়ে। এই লক্ষণগুলো যখন ক্রমাগত দেখা দেবে এবং জীবনের স্বাভাবিক কাজকর্মে প্রভাব ফেলবে, তখন আর দেরি না করে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে সমস্যা চিহ্নিত করতে পারলে তার সমাধান করাও সহজ হয়।

বিষমদৃষ্টির লক্ষণ: সূক্ষ্ম পার্থক্যগুলো চিনে নিন

অ্যাস্টিগম্যাটিজমের লক্ষণগুলো মায়োপিয়ার চেয়ে কিছুটা সূক্ষ্ম এবং প্রায়শই মায়োপিয়ার সাথে মিশে থাকে। আমার এক বান্ধবী, যার অ্যাস্টিগম্যাটিজম ছিল, সে বলেছিল যে তার নাকি শুধু ঝাপসা দেখায় না, বরং সবকিছু কিছুটা বেঁকেচুরে যায়, আর আলোর চারপাশে একটা লম্বাটে আভা দেখা যায়। যেমন, রাতের বেলায় গাড়ির হেডলাইট বা স্ট্রিটলাইটের আলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে হয়। এই লক্ষণটা মায়োপিয়ার চেয়ে অ্যাস্টিগম্যাটিজমকে আলাদা করে তোলে। আরও কিছু লক্ষণ হলো – একটানা মাথা ব্যথা, চোখের উপর অতিরিক্ত চাপ অনুভব করা, চোখ কুঁচকে দেখার চেষ্টা করা, এবং অক্ষরের চারপাশে ছায়া দেখা বা ডাবল ইমেজ দেখা। যখন এই লক্ষণগুলো দীর্ঘ সময় ধরে থাকবে এবং আপনার দৈনন্দিন কাজ যেমন পড়াশোনা, লেখালেখি বা গাড়ি চালানোর সময় অসুবিধা তৈরি করবে, তখন দ্রুত একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ অ্যাস্টিগম্যাটিজম সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে চোখের ক্লান্তি এবং মাথাব্যথা আরও বাড়তে পারে।

চোখের যত্ন: আধুনিক সমাধান ও কিছু কার্যকর টিপস

দৃষ্টিশক্তি সংশোধনের আধুনিক পদ্ধতি

চোখের সমস্যার সমাধান মানেই কিন্তু শুধু চশমা নয়। আজকাল দৃষ্টিশক্তি সংশোধনের জন্য অনেক আধুনিক পদ্ধতি রয়েছে, যা জীবনকে আরও সহজ করে তুলতে পারে। আমার অনেক বন্ধুকে দেখেছি যারা চশমা বা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করে তাদের দৃষ্টিশক্তিকে স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম। মায়োপিয়া এবং অ্যাস্টিগম্যাটিজম উভয় ক্ষেত্রেই চশমা এবং কন্টাক্ট লেন্স হলো সবচেয়ে সাধারণ এবং কার্যকরী সমাধান। চশমার ক্ষেত্রে মায়োপিয়ার জন্য অবতল লেন্স (concave lens) এবং অ্যাস্টিগম্যাটিজমের জন্য সিলিন্ড্রিক্যাল লেন্স (cylindrical lens) ব্যবহার করা হয়। আর যারা চশমা পরতে চান না, তাদের জন্য কন্টাক্ট লেন্স একটি চমৎকার বিকল্প। তবে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া, যারা স্থায়ী সমাধান চান, তাদের জন্য LASIK বা অন্যান্য রিফ্র্যাক্টিভ সার্জারি একটি আধুনিক বিকল্প হতে পারে। আমার পরিচিত একজন LASIK করিয়েছেন এবং তার অভিজ্ঞতা খুবই ভালো, তিনি এখন চশমা ছাড়াই স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। তবে, এই ধরনের সার্জারি সবার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে, তাই ডাক্তারের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

চোখের স্বাস্থ্যের জন্য কিছু সহজ টিপস

근시와 난시 차이 - **Prompt for Astigmatism (Distorted vision, especially with lights):**
    "An adult in their late 2...

চোখের যত্ন শুধু ডাক্তারের উপর ছেড়ে দিলেই হবে না, আমাদের নিজেদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। আমি নিজেই কিছু ছোট ছোট অভ্যাস গড়ে তুলেছি, যা আমার চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। যেমন, “২০-২০-২০” নিয়ম মেনে চলা: প্রতি ২০ মিনিট পর পর ২০ ফুট দূরের কোনো বস্তুর দিকে ২০ সেকেন্ডের জন্য তাকানো। এটা চোখের পেশিগুলোকে আরাম দিতে সাহায্য করে। এছাড়া, দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনে কাজ করার সময় নিয়মিত বিরতিতে চোখকে বিশ্রাম দেওয়া খুবই জরুরি। আমি প্রতি ঘন্টায় একবার উঠে একটু হাঁটাচলা করি বা জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকি। পর্যাপ্ত ঘুম চোখের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত, যাতে চোখ পুরোপুরি বিশ্রাম পায়। পুষ্টিকর খাবার, বিশেষ করে ভিটামিন এ, সি, ই এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, সবুজ শাকসবজি, গাজর, বাদাম ইত্যাদি চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। আমি চেষ্টা করি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এগুলো রাখতে। বাইরের ধুলাবালি বা উজ্জ্বল আলো থেকে চোখকে রক্ষা করার জন্য সানগ্লাস ব্যবহার করাও একটি ভালো অভ্যাস। আর অবশ্যই, প্রতি বছর অন্তত একবার চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে চোখ পরীক্ষা করানো উচিত, এমনকি আপনার কোনো সমস্যা না থাকলেও।

Advertisement

শিশুদের চোখ: আগামীর জন্য কতটা জরুরি?

শিশুদের দৃষ্টিশক্তির গুরুত্ব

শিশুদের চোখের যত্ন নেওয়াটা আমাদের জন্য একটা বড় দায়িত্ব, কারণ তাদের চোখের স্বাস্থ্য তাদের সামগ্রিক বিকাশ এবং ভবিষ্যতের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমার যখন ছোটবেলায় চোখের সমস্যা শুরু হয়েছিল, তখন আমার বাবা-মা আমাকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন, যার ফলে সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করা গিয়েছিল। শিশুদের যদি দৃষ্টিশক্তি ভালো না থাকে, তাহলে তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ কমে যায়, খেলাধুলায় সমস্যা হয়, এমনকি তাদের সামাজিক বিকাশেও বাধা সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময় শিশুরা তাদের চোখের সমস্যা মুখে বলতে পারে না, তাই বাবা-মায়ের উচিত তাদের আচরণ ও লক্ষণগুলো carefully observe করা। যেমন, তারা কি বই মুখের খুব কাছে নিয়ে পড়ে? টেলিভিশন খুব কাছ থেকে দেখে? স্কুলের ব্ল্যাকবোর্ড দেখতে সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে? যদি এমন কোনো লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে দ্রুত একজন শিশু চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ শৈশবে চোখের সমস্যার সঠিক চিকিৎসা না হলে তা দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, এমনকি স্থায়ী দৃষ্টিশক্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ডিজিটাল স্ক্রিন থেকে সুরক্ষা: ছোটদের জন্য বিশেষ টিপস

আজকাল ডিজিটাল স্ক্রিন আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, এমনকি ছোট শিশুদের ক্ষেত্রেও। আমার মনে পড়ে, ছোটবেলায় আমাদের এত গ্যাজেট ছিল না, আমরা সারাদিন বাইরে খেলাধুলা করতাম। কিন্তু এখনকার শিশুরা জন্মের পর থেকেই স্মার্টফোনের সাথে পরিচিত। তাই, তাদের চোখকে ডিজিটাল স্ক্রিনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমার মতে, শিশুদের স্ক্রিন টাইম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য কোনো স্ক্রিন টাইম না রাখাটাই ভালো। আর বড় শিশুদের জন্য প্রতিদিন ১-২ ঘণ্টার বেশি স্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত নয়। এর পাশাপাশি, যখন তারা স্ক্রিন ব্যবহার করবে, তখন তাদের চোখ ও স্ক্রিনের মধ্যে একটি নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। নিয়মিত বিরতিতে চোখকে বিশ্রাম দেওয়া, যেমন প্রতি ৩০ মিনিট পর পর স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে ২০ ফুট দূরে কোনো বস্তুর দিকে তাকানো – এই অভ্যাসগুলো ছোটবেলা থেকেই গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া, তাদেরকে বেশি করে বাইরে প্রাকৃতিক পরিবেশে খেলাধুলা করতে উৎসাহিত করা উচিত, কারণ সূর্যের আলো চোখের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য খুবই জরুরি। পুষ্টিকর খাবার এবং পর্যাপ্ত ঘুমও শিশুদের চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। বাবা-মা হিসেবে আমাদেরকেই এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।

চশমা, কন্টাক্ট লেন্স নাকি লেজার? সঠিক সিদ্ধান্ত কোনটি?

প্রত্যেকের জন্য সেরা সমাধান

যখন চোখের সমস্যা ধরা পড়ে, তখন আমাদের মনে প্রথম প্রশ্ন আসে – কোনটা আমার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে? চশমা, কন্টাক্ট লেন্স নাকি লেজার অপারেশন? আমার পরিচিত অনেকেই এই দ্বিধায় ভোগেন। এর উত্তর কিন্তু প্রত্যেকের জন্য আলাদা। চশমা হলো সবচেয়ে সহজ এবং নিরাপদ সমাধান। এটি দ্রুত দৃষ্টিশক্তি সংশোধন করে এবং এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। মায়োপিয়া, অ্যাস্টিগম্যাটিজম, হাইপারোপিয়া – সব সমস্যার জন্যই চশমা পাওয়া যায়। তবে, খেলাধুলা বা কিছু নির্দিষ্ট পেশার ক্ষেত্রে চশমা কিছুটা অসুবিধাজনক হতে পারে। তখন কন্টাক্ট লেন্স একটি চমৎকার বিকল্প। আমার এক বোন কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করে, কারণ সে খেলাধুলা করে এবং তার চশমা পরতে অসুবিধা হয়। কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারকারীদের দৃষ্টিশক্তি প্রায় স্বাভাবিক মনে হয়, কারণ লেন্স সরাসরি চোখের উপর থাকে। তবে কন্টাক্ট লেন্সের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত জরুরি, না হলে চোখের সংক্রমণ হতে পারে। আর যারা স্থায়ী সমাধান চান এবং চশমা বা লেন্সের ঝুটঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে চান, তাদের জন্য LASIK বা অন্যান্য রিফ্র্যাক্টিভ সার্জারি একটি সম্ভাবনাময় পথ। তবে, এই অপারেশনের আগে ডাক্তারের সাথে বিস্তারিত আলোচনা এবং চোখের সম্পূর্ণ পরীক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লেজার সার্জারির সঠিক সময় ও প্রস্তুতি

লেজার সার্জারি, যেমন LASIK, আজকাল চোখের সমস্যার একটি জনপ্রিয় স্থায়ী সমাধান। আমার এক বন্ধু LASIK করিয়েছিল এবং সে তার সিদ্ধান্ত নিয়ে খুবই খুশি। তবে, এই সার্জারি সবার জন্য উপযুক্ত নয় এবং এর জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়। সাধারণত, ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী রোগীদের জন্য LASIK করা হয়, যাদের চোখের পাওয়ার গত এক বছর ধরে স্থিতিশীল আছে। গর্ভবতী মহিলা বা যারা শিশুকে বুকের দুধ পান করাচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই সার্জারি করা হয় না। এছাড়াও, যাদের চোখের শুষ্কতা, গ্লুকোমা বা অন্যান্য গুরুতর চোখের রোগ আছে, তাদের জন্য LASIK উপযুক্ত নাও হতে পারে। সার্জারির আগে ডাক্তারের সাথে বিস্তারিত আলোচনা এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা-নিরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি। ডাক্তার আপনার চোখের কর্নিয়ার পুরুত্ব, আকৃতি এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন। সার্জারির প্রস্তুতি হিসেবে সাধারণত কিছু দিন আগে থেকে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার বন্ধ করতে হয়। লেজার সার্জারি চোখের পাওয়ার পুরোপুরি সরিয়ে ফেলতে পারে, কিন্তু এর কিছু ঝুঁকিও আছে, যেমন চোখে শুষ্কতা, আলোর চারপাশে আভা দেখা বা রাতে দেখতে অসুবিধা হওয়া। তাই, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব দিক বিবেচনা করা উচিত।

Advertisement

চোখের যত্ন ও সমস্যাগুলো সংক্ষেপে

বৈশিষ্ট্য মায়োপিয়া (Myopia) বা অদূরদৃষ্টি অ্যাস্টিগম্যাটিজম (Astigmatism) বা বিষমদৃষ্টি
মূল কারণ চোখের অক্ষিগোলকের দৈর্ঘ্য স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়া অথবা কর্নিয়া/লেন্স অতিরিক্ত বাঁকা হওয়া। কর্নিয়া বা লেন্সের পৃষ্ঠে অসম বক্রতা (অনিয়মিত আকৃতি)।
লক্ষণ দূরের বস্তু ঝাপসা দেখা, চোখের ক্লান্তি, মাথা ব্যথা, চোখ কুঁচকে দেখা। কাছে ও দূরের উভয় বস্তু ঝাপসা ও বিকৃত দেখা, আলোর চারপাশে আভা বা স্টারবার্স্ট ইফেক্ট, অক্ষরের ছায়া দেখা, চোখের চাপ ও মাথাব্যথা।
আলোর ফোকাস আলোক রশ্মি রেটিনার সামনে ফোকাস করে। একাধিক ফোকাস পয়েন্ট তৈরি হয়, রেটিনার ওপর সঠিকভাবে ফোকাস হয় না।
সংশোধন পদ্ধতি অবতল লেন্স (concave lens), কন্টাক্ট লেন্স, LASIK সার্জারি। সিলিন্ড্রিক্যাল লেন্স (cylindrical lens), টরিক কন্টাক্ট লেন্স, LASIK সার্জারি।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা স্ক্রিন টাইম কমানো, “২০-২০-২০” নিয়ম মেনে চলা, পর্যাপ্ত ঘুম, পুষ্টিকর খাবার, নিয়মিত চোখ পরীক্ষা। স্ক্রিন টাইম কমানো, চোখের সঠিক বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাবার, নিয়মিত চোখ পরীক্ষা (কারণ জন্মগত কারণেও হতে পারে)।

লেখার শেষে

এই ডিজিটাল যুগে আমাদের চোখ যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আমরা সবাই জানি। মায়োপিয়া হোক বা অ্যাস্টিগম্যাটিজম, এই ধরনের সমস্যাগুলো আজকাল খুব সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এবং শিশুদের মধ্যে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, চোখের সামান্য অবহেলাও কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক বড় সমস্যার কারণ হতে পারে, শুধু দৃষ্টিশক্তি নয়, মাথাব্যথা আর ক্লান্তিও বাড়িয়ে তোলে। তাই, এই সমস্যাগুলোকে সময় মতো চিনে নিয়ে একজন ভালো চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াটা খুবই জরুরি। নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করানো, স্ক্রিনের অতিরিক্ত ব্যবহার কমানো, এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন গড়ে তোলা—এই ছোট ছোট পদক্ষেপগুলোই কিন্তু আমাদের চোখকে দীর্ঘমেয়াদী সুস্থ রাখতে দারুণভাবে সাহায্য করবে। মনে রাখবেন, চোখ হলো আমাদের পৃথিবীর জানালা, আর এই অমূল্য জানালার যত্ন নেওয়াটা আমাদের সবার দায়িত্ব। আসুন, সবাই মিলে আমাদের চোখের সুরক্ষায় আরও বেশি সচেতন এবং যত্নশীল হই। সুস্থ চোখ মানেই সুন্দর পৃথিবী, তাই না?

Advertisement

কিছু দরকারী তথ্য জেনে রাখুন

১. স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ করুন: আজকাল আমরা সারাক্ষণ মোবাইল বা কম্পিউটারের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকি। আমার মনে হয়, এই অভ্যাসটা আমাদের চোখের জন্য মোটেও ভালো নয়। প্রতি ২০ মিনিট পর পর অন্তত ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরে কোনো বস্তুর দিকে তাকান। এই “২০-২০-২০” নিয়মটা চোখের পেশিগুলোকে আরাম দিতে ভীষণ কাজে দেয়।

২. পর্যাপ্ত আলোতে কাজ করুন: যখন বই পড়েন বা কম্পিউটার ব্যবহার করেন, তখন খেয়াল রাখুন যেন ঘরের আলো পর্যাপ্ত হয়। কম আলোতে বা খুব উজ্জ্বল আলোতে কাজ করলে চোখের ওপর চাপ পড়ে। আমার অভিজ্ঞতা বলে, প্রাকৃতিক আলোতে কাজ করা বা পড়া সবচেয়ে ভালো।

৩. পুষ্টিকর খাবার খান: চোখের সুস্থতার জন্য ভিটামিন এ, সি, ই এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গাজর, সবুজ শাকসবজি, মাছ, ডিম আর বাদাম জাতীয় খাবার নিয়মিত আপনার খাদ্যতালিকায় রাখুন। আমি নিজেও চেষ্টা করি প্রতিদিন এই খাবারগুলো বেশি করে খেতে।

৪. নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করান: আপনার চোখে কোনো সমস্যা থাকুক বা না থাকুক, প্রতি বছর অন্তত একবার একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে চোখ পরীক্ষা করানোটা খুবই জরুরি। বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই বিষয়টা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা অনেক সময় নিজের সমস্যা বলতে পারে না।

৫. বাচ্চাদের স্ক্রিন টাইম সীমিত রাখুন: শিশুদের চোখের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য ডিজিটাল স্ক্রিনের ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। তাদের বাইরে খেলাধুলা করতে উৎসাহিত করুন এবং স্ক্রিন ব্যবহারের সময় একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে শেখান। আমার ভাগ্নের ক্ষেত্রে আমরা এই নিয়মগুলো মেনে চলি, যা ওর চোখের জন্য খুবই উপকারী হয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সংক্ষেপে

বন্ধুরা, আমাদের আজকের আলোচনা থেকে মায়োপিয়া এবং অ্যাস্টিগম্যাটিজম সম্পর্কে আমরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনেছি। প্রথমত, মায়োপিয়ায় দূরের জিনিস ঝাপসা দেখা যায় কারণ আলো রেটিনার সামনে ফোকাস হয়, আর অ্যাস্টিগম্যাটিজমে কাছে ও দূরের উভয় বস্তু বিকৃত দেখায় কর্নিয়ার অসম আকৃতির কারণে। দ্বিতীয়ত, এই সমস্যাগুলোর পেছনে জিনগত কারণ যেমন থাকে, তেমনি আমাদের আধুনিক জীবনযাপন ও অতিরিক্ত স্ক্রিন ব্যবহারেরও বড় ভূমিকা রয়েছে। তৃতীয়ত, চোখ কুঁচকে দেখা, মাথাব্যথা, চোখের ক্লান্তি বা আলোর চারপাশে আভা দেখা – এমন কোনো লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চতুর্থত, চশমা, কন্টাক্ট লেন্স এবং লেজার সার্জারি হলো দৃষ্টিশক্তি সংশোধনের আধুনিক উপায়, যার মধ্যে আপনার জন্য কোনটা সবচেয়ে ভালো হবে, তা ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে ঠিক করতে হবে। পরিশেষে, শিশুদের চোখের যত্ন নেওয়া আমাদের জন্য একটি বড় দায়িত্ব, কারণ তাদের চোখের স্বাস্থ্য তাদের সামগ্রিক বিকাশে প্রভাব ফেলে। নিয়মিত চোখ পরীক্ষা, স্ক্রিন বিরতি এবং পুষ্টিকর খাবার—এই অভ্যাসগুলো মেনে চললে আমরা সবাই সুস্থ চোখ নিয়ে একটি সুন্দর জীবন উপভোগ করতে পারব।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖

আমরা যারা আধুনিক ডিজিটাল যুগে বাস করছি, তাদের চোখের ওপর চাপটা অনেক বেড়ে গেছে, তাই না? বিশেষ করে স্মার্টফোন আর কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ যে কখন ক্লান্ত হয়ে যায়, টেরও পাই না। চারপাশে এত মানুষের চোখে চশমা দেখছি, ভাবি এটা কি শুধু বয়স বাড়ার লক্ষণ, নাকি এর পেছনে আরও কিছু কারণ আছে?

আমার নিজের অভিজ্ঞতাতেও দেখেছি, একটানা স্ক্রিন দেখলে দূর বা কাছের জিনিস দেখতে কেমন যেন ঝাপসা লাগে, মাথাটাও ধরে ওঠে। এই সমস্যাগুলো কিন্তু খুব সাধারণ, আর এর মধ্যে দুটো প্রধান কারণ হলো মায়োপিয়া (Myopia) বা অদূরদৃষ্টি এবং অ্যাস্টিগম্যাটিজম (Astigmatism) বা বিষমদৃষ্টি। অনেকেই হয়তো ভাবেন, দুটোই তো চোখের সমস্যা, নিশ্চয়ই একই রকম কিছু হবে?

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এদের কারণ আর লক্ষণে বেশ কিছু সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে, যা জেনে রাখাটা সত্যিই জরুরি। বিশেষ করে আজকাল ছোটদের মধ্যেও স্ক্রিন আসক্তির কারণে চোখের নানা সমস্যা বাড়ছে, যা রীতিমতো উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দুটো সমস্যার মধ্যে আসলে কী ধরনের ফারাক আছে, কোনটা আপনার জন্য বেশি চিন্তার, আর কীভাবে বুঝবেন আপনার চোখে ঠিক কোন সমস্যাটি হচ্ছে – এই সবকিছুই কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য খুব প্রয়োজনীয় তথ্য। নিজের চোখের যত্ন নেওয়ার প্রথম ধাপই হলো সমস্যাটা ঠিকভাবে চিনে নেওয়া। চলুন, তাহলে দেরি না করে এই বিষয়ে একদম খুঁটিনাটি জেনে নিই।A1: সত্যি কথা বলতে কী, এই দুটো সমস্যার মধ্যে পার্থক্যটা খুব সূক্ষ্ম, কিন্তু ভীষণ জরুরি। মায়োপিয়া বা অদূরদৃষ্টির ক্ষেত্রে কী হয় জানেন তো?

আমাদের চোখের মণি বা লেন্সের আকার কোনোভাবে লম্বাটে হয়ে যায়, অথবা চোখের কর্নিয়া বেশি বাঁকা থাকে। এর ফলে দূরের জিনিসগুলো ঝাপসা দেখায়, কিন্তু কাছের জিনিস ঠিকঠাক দেখা যায়। অনেকটা এমন যে, আপনি খুব দূরে লাগানো কোনো সাইনবোর্ড স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন না, কিন্তু আপনার হাতের বইটা পড়তে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। আমার একবার এমন হয়েছিল, ক্লাসের পেছনের বেঞ্চে বসে সামনের বোর্ডের লেখাগুলো ঝাপসা লাগছিল, পরে বুঝলাম এটা মায়োপিয়ার লক্ষণ।অন্যদিকে, অ্যাস্টিগম্যাটিজম বা বিষমদৃষ্টির ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। এক্ষেত্রে কর্নিয়া বা লেন্সের আকৃতি পুরোপুরি গোলাকার না হয়ে কিছুটা ডিম্বাকার বা অসমতল হয়ে যায়। অনেকটা ফুটবলের বদলে রাগবি বলের মতো!

এই অসম আকৃতির কারণে আলোকরশ্মি রেটিনায় সঠিকভাবে ফোকাস করতে পারে না। ফলে দূরের এবং কাছের দুটো জিনিসই ঝাপসা বা বিকৃত দেখায়। মানে, শুধু দূরের জিনিস নয়, কাছের জিনিস দেখতেও সমস্যা হতে পারে, এমনকি সোজা রেখাও বাঁকা মনে হতে পারে। আমার এক বন্ধু একবার অভিযোগ করছিল, ল্যাপটপে কাজ করার সময় অক্ষরগুলো কেমন যেন টানা টানা লাগছে, পরে ডাক্তারের কাছে গিয়ে জানতে পারল তার অ্যাস্টিগম্যাটিজম হয়েছে। দুটো ক্ষেত্রেই চোখ কুঁচকে তাকানো, মাথাব্যথা বা চোখে চাপ লাগার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে, তাই সঠিক কারণ জানতে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াটা খুব দরকারি।A2: আহারে!

এই প্রশ্নটা আজকাল প্রায় সবার মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে। আমার তো মনে হয়, স্মার্টফোন আর কম্পিউটার আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে, বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও। আর এর খারাপ প্রভাব যে চোখের ওপর পড়ছে, এটা একদম সত্যি। বিভিন্ন গবেষণা আর চিকিৎসকরা বারবার বলছেন যে, ডিজিটাল স্ক্রিনে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকার কারণে শিশুদের মধ্যে মায়োপিয়া বা অদূরদৃষ্টির প্রবণতা বাড়ছে। এমনকি আমার পরিচিত অনেক অভিভাবককেই দেখি, বাচ্চাকে শান্ত রাখার জন্য বা খাওয়ানোর সময় মোবাইল ধরিয়ে দেন। এতে করে ছোটবেলা থেকেই ওদের চোখে যে চাপ পড়ে, তা ভবিষ্যতে বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একটানা স্ক্রিন দেখলে চোখ শুষ্ক হয়ে যায়, ঝাপসা দেখা, মাথাব্যথা, এমনকি মনোযোগের অভাবও দেখা দিতে পারে, যা ‘কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম’ নামে পরিচিত।কিন্তু উপায় কী?

আমরা কি ডিজিটাল জীবন পুরোপুরি ছেড়ে দেব? নিশ্চয়ই না! এর জন্য কিছু সহজ টিপস মেনে চলতে পারি:* প্রথমত, ‘২০-২০-২০ নিয়ম’টা মেনে চলুন। প্রতি ২০ মিনিট স্ক্রিনে কাজ করার পর, ২০ ফুট দূরে থাকা কোনো জিনিসের দিকে অন্তত ২০ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকুন। আর হ্যাঁ, মাঝে মাঝে পলক ফেলতে ভুলবেন না, এতে চোখ শুষ্ক হবে না।
* শিশুদের জন্য প্রতিদিন স্ক্রিন টাইম ৩০ মিনিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করুন। ওদের বাইরে খেলাধুলা করার সুযোগ করে দিন। প্রাকৃতিক আলোতে থাকা চোখের জন্য খুব উপকারী।
* পর্যাপ্ত আলোতে কাজ করুন, কিন্তু সরাসরি উজ্জ্বল আলো যেন চোখে না পড়ে।
* চোখ ঘষা থেকে বিরত থাকুন, কারণ হাতে লেগে থাকা ময়লা বা ব্যাকটেরিয়া চোখে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
* আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করানো। বিশেষ করে ৪ থেকে ৬ বছর বয়সী বাচ্চাদের বছরে অন্তত একবার চোখ পরীক্ষা করানো জরুরি। এতে কোনো সমস্যা শুরুতেই ধরা পড়লে দ্রুত সমাধান করা সম্ভব।A3: আপনার এই চিন্তাভাবনাটা খুবই স্বাভাবিক। যখন চোখে কোনো সমস্যা ধরা পড়ে, তখন আমাদের প্রথম প্রশ্নই হয়, এর কি কোনো স্থায়ী সমাধান আছে?

মায়োপিয়া বা অ্যাস্টিগম্যাটিজম কিন্তু কোনো incurable রোগ নয়, এর ব্যবস্থাপনা এবং চিকিৎসার অনেক আধুনিক পদ্ধতি এখন আছে।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, চশমা বা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করে এই সমস্যাগুলো সংশোধন করা হয়। আমার নিজের এক আত্মীয় বছরের পর বছর চশমা ব্যবহার করে দিব্যি সুস্থ আছেন। তবে, যদি আপনি চশমা বা লেন্সের ওপর নির্ভর না করতে চান, তাহলে স্থায়ী সমাধানের জন্য কিছু সার্জিক্যাল অপশনও আছে। যেমন, লেজার সার্জারি (LASIK) এখন খুব জনপ্রিয়। এই পদ্ধতিতে কর্নিয়ার আকৃতি পরিবর্তন করে আলোকরশ্মিকে রেটিনায় সঠিকভাবে ফোকাস করার ব্যবস্থা করা হয়। তবে, এই সার্জারি সবার জন্য উপযুক্ত নয় এবং কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়, যেমন চোখের পাওয়ার স্থিতিশীল থাকতে হবে এবং কোনো গুরুতর চোখের রোগ থাকা চলবে না।মায়োপিয়ার ক্ষেত্রে, বিশেষ ধরনের চশমা বা কন্টাক্ট লেন্স (যেমন অর্থো-কেরাটোলজি বা Ortho-K লেন্স) ব্যবহার করা হয় যা মায়োপিয়ার বৃদ্ধিকে ধীর করতে সাহায্য করে, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কিছু ক্ষেত্রে এট্রোপিন ড্রপও ব্যবহার করা হয় মায়োপিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য। অ্যাস্টিগম্যাটিজমের জন্যও টরিক কন্টাক্ট লেন্স বা লেজার সার্জারি বেশ কার্যকর।মনে রাখবেন, কোন চিকিৎসা পদ্ধতি আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে, তা নির্ভর করে আপনার মায়োপিয়া বা অ্যাস্টিগম্যাটিজমের তীব্রতা, আপনার বয়স, চোখের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং আপনার জীবনযাত্রার পছন্দের ওপর। তাই, একজন অভিজ্ঞ চক্ষু বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত পথটি বেছে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নিলে স্পষ্ট দৃষ্টি নিয়ে আপনিও সুন্দরভাবে জীবন উপভোগ করতে পারবেন, আমার বিশ্বাস!

📚 তথ্যসূত্র

Advertisement